গতকাল অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে, ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং শি জিনপিং শুল্কবিরতি সম্প্রসারণ, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে শিথিলতা এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক বাধা হ্রাস করার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন — এই পদক্ষেপগুলো বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে কয়েক মাসের অস্থিরতার পর পারস্পারিক সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে পারে।
দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যাশিত এই খবরটি বৈশ্বিক ফিন্যান্সিয়াল মার্কেটে স্বস্তি বয়ে এনেছে। বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে চলমান অনিশ্চয়তায় ক্লান্ত বিনিয়োগকারীরা এই চুক্তিকে উত্তেজনা প্রশমিত হওয়ার এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতায় প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখেছেন। এর ফলে কারেন্সি মার্কেটে মার্কিন ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
তবে, বিদ্যমান আশাবাদের মধ্যেও বিশ্লেষকরা সতর্ক থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।

তাদের প্রথম সাক্ষাতে, দুই দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ একমত হন যে, চীন বিরল খনিজ উপাদানের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ স্থগিত করবে, যার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র চীনা কোম্পানিগুলোর ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ সম্প্রসারণ থেকে সরে আসবে। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র ফেন্টানিল সম্পর্কিত চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক অর্ধেকে নামিয়ে আনবে, এবং বেইজিং পুনরায় সয়াবিন ও অন্যান্য মার্কিন কৃষিপণ্যের ক্রয় শুরু করবে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত পারস্পরিক শুল্কগুলোর সাময়িক স্থগিতাদেশের সময়কাল আরও এক বছরের জন্য বৃদ্ধি পাবে। তারা আরও উল্লেখ করেছে, টিকটক সম্পর্কিত বিষয়ে চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে, তিনি আগামী বছর এপ্রিল মাসে চীন সফর করবেন এবং শি জিনপিং তারপর যুক্তরাষ্ট্র সফরের পরিকল্পনা করেছেন।
বুসানে অনুষ্ঠিত শি জিনপিংয়ের সাথে বৈঠক শেষে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, "যদি ০ থেকে ১০-এর স্কেলে বিবেচনা করি, যেখানে ১০ সর্বোচ্চ, তাহলে আমি এই বৈঠককে ১২ দেব। তোমরা জানো, এই দুই দেশের পারস্পারিক সম্পর্কের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি সবকিছু খুব ভালো ভাবে হয়েছে।"
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট পরে বলেন, "আমি আশা করি আগামী সপ্তাহেই চুক্তি সাক্ষরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।"
চীনের সিনহুয়া সংবাদ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, শি জিনপিং জোর দিয়ে বলেন, দ্বন্দ্বের চেয়ে সংলাপ সর্বদা ইতিবাচক, এবং তিনি বাণিজ্য, জ্বালানি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য আরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আহ্বান জানান।
এই ফলাফল হিসেবে, অন্তত আপাতত, কয়েক মাস ধরে চলা বাণিজ্যযুদ্ধের অবসান ঘটতে পারে। এই সময়কালে দুই দেশই একে অপরের পণ্যের ওপর শুল্ক ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আরোপের হুমকি দিয়েছিল, যা আবারো বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলা ব্যাহত করতে পারত এবং বিশ্বের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারত। তবে, এটি কোনো পূর্ণাঙ্গ চুক্তি নয় — বরং যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বৃহত্তর অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে ঘিরে থাকা গভীর সমস্যাগুলোর সমাধান এখনো বাকি রয়েছে।
একটি আলাদা ইস্যু হলো এনভিডিয়া চিপস। জল্পনা ছিল ট্রাম্প মার্কিন সংস্থাগুলঐকে এনভিডিয়ার সর্বাধুনিক ব্ল্যাকওয়েল প্রসেসরের এক্সেস দেওয়ার মতো অতিরিক্ত ছাড় দিতে পারেন, তবে প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করেছেন যে এ বিষয়টি আলোচিত হয়নি। তবে ট্রাম্প ও শি এনভিডিয়ার কিছু অন্যান্য প্রোডাক্টের এক্সেস নিয়ে আলোচনা করেছেন। ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন, শিগগিরই তিনি এনভিডিয়ার সিইও জেন্সেন হুয়াং-এর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবেন।
পরে ট্রুথ সোশ্যাল-এ একটি পোস্টে ট্রাম্প যুক্ত করেন, "যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের কর্মকর্তারা শিগগিরই জ্বালানি খাতের সহযোগিতা কার্যক্রম নিয়ে বৈঠক করবেন।"
তিনি লেখেন, "চীন সম্মত হয়েছে যে, তারা মার্কিন জ্বালানি সম্পদ কেনার প্রক্রিয়া শুরু করবে। মূলত, আলাস্কার 'গ্রেট স্টেট' থেকে তেল এবং গ্যাস কেনার জন্য একটি বৃহৎ চুক্তি হতে পারে।"
উপরে উল্লিখিত পরিস্থিতির ধারাবাহিকতায়, কারেন্সি মার্কেটে এখনও মার্কিন ডলারের শক্তিশালী চাহিদা বজায় রয়েছে।
বর্তমানে EUR/USD পেয়ারের টেকনিক্যাল চিত্র অনুযায়ী, ক্রেতাদের এখন এই পেয়ারের মূল্যকে 1.1580 লেভেলে পুনরুদ্ধার করার বিষয়ে চিন্তা করা উচিত। শুধুমাত্র মূল্য এই লেভেলে ফিরে এলে 1.1610-এর লেভেল টেস্ট করার পথ সুগম হবে। সেখান থেকে এই পেয়ারের মূল্য 1.1640 পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যদিও মার্কেটের বড় ট্রেডারদের সহায়তা ছাড়া তা করা কঠিন হবে। সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা হলো 1.1695-এর লেভেল। তবে, যদি মূল্য 1.1550-এর কাছাকাছি নেমে আসে, তাহলে মূল্য সেখানে থাকা অবস্থায় আমি শক্তিশালী ক্রয় কার্যকলাপের প্রত্যাশা করছি। যদি সেখানে বড় ক্রেতারা সক্রিয় না হন, তাহলে এই পেয়ারের মূল্যের 1.1520-এর লেভেলে নেমে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে, অথবা 1.1489 থেকে লং পজিশন ওপেন করার সুযোগ খোঁজা যেতে পারে।
বর্তমানে GBP/USD পেয়ারের টেকনিক্যাল চিত্র অনুযায়ী, পাউন্ডের ক্রেতাদের এই পেয়ারের মূল্যকে প্রাথমিক রেজিস্ট্যান্স লেভেল 1.3175-এ পুনরুদ্ধার করা প্রয়োজন। কেবল তখনই এই পেয়ারের মূল্যের 1.3220-এর দিকে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা সম্ভব হবে, যদিও এই লেভেলে ব্রেক করে ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার বেশ চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা হলো 1.3245 লেভেল। অন্যদিকে, যদি দরপতন ঘটে, তাহলে এই পেয়ারের মূল্য 1.3115-এ থাকা অবস্থায় বিক্রেতারা পুনরায় মার্কেটে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করবে। যদি তারা সফল হয়, তাহলে এই রেঞ্জ ব্রেক করে নিম্নমুখী হলে GBP/USD পেয়ারের মূল্য 1.3075-এর লেভেল এবং পরবর্তীতে 1.3030-এর দিকে নেমে যেতে পারে।