
গত সপ্তাহে ঐতিহাসিক সর্বোচ্চ মূল্যের কাছ থেকে স্বর্ণের মূল্যের কারেকশন শুরু হয়। স্বল্পমেয়াদে আরও কিছুটা দরপতনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, এই দঢ়পতন দীর্ঘমেয়াদী আশাবাদের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি।
লন্ডন বুলিয়ন মার্কেট অ্যাসোসিয়েশনের (LBMA) বার্ষিক ওয়ার্ল্ড গোল্ড কনফারেন্সে অংশগ্রহণকারী বক্তারা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, আগামী বছরের এই সময়ের মধ্যে স্বর্ণের মূল্য প্রতি আউন্সে $5,000-এর ঠিক নিচের একটি রেজিস্ট্যান্স লেভেলে পৌঁছাতে পারে, যা বর্তমান মূল্যের তুলনায় ২৫% বেশি। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এটি LBMA-এর বক্তাদের পক্ষ থেকে সবচেয়ে ইতিবাচক পূর্বাভাস, যেখানে তারা সবসময়ই এই মূল্যবান ধাতুর কিছুটা কম করে মূল্য বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়ে থাকেন।
HSBC এবং ব্যাংক অব আমেরিকার মতো বৃহৎ আর্থিক সংস্থাগুলোও একই ধরণের দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছে: তারা প্রত্যাশা করছে যে ২০২৬ সালের মধ্যে স্বর্ণের দর প্রতি আউন্সে $5,000-এ পৌঁছাবে। ব্রিটিশ গবেষণা সংস্থা মেটালস ফোকাস-ও পূর্বাভাস দিয়েছে যে আগামী বছর স্বর্ণের দাম $5,000-এ পৌঁছাতে পারে এবং রূপার দাম বেড়ে আউন্স প্রতি $60 হতে পারে। সামান্য দঢ়পতন সত্ত্বেও বিশ্লেষকরা জোর দিয়ে বলছেন, বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এবং ফেডারেল রিজার্ভের পক্ষ থেকে মৌদ্রিক নীতিমালা নমনীয় করার প্রত্যাশার কারণে স্বর্ণের চাহিদা এখনও শক্তিশালী আছে—যা মার্কিন ডলারকে দুর্বল করবে।
তবে সবাই পুরোপুরিভাবে এই আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছেন না। বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, আগামী বছরে স্বর্ণের দাম ৫% বাড়তে পারে, আর ফরাসি কর্পোরেট বিনিয়োগ ব্যাংক ন্যাটিক্সিস ২০২৬ সালে প্রতি আউন্স স্বর্ণের গড় মূল্য $3,800 হতে পারে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে। যদিও এই পূর্বাভাসগুলো তুলনামূলকভাবে রক্ষণশীল, তবুও সেগুলোকে নেতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, স্বর্ণের মূল্য কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও ২০২৬ সালে মূল্য ২০১৫-২০১৯ সালের গড় দামের চেয়ে ১৮০%-এর বেশি থাকবে।
যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো বৈচিত্র্য আনতে তাদের স্বর্ণের মজুদ বাড়িয়ে নিচ্ছে, তখন হতাশাবাদী হওয়া কঠিন। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল জানিয়েছে, তৃতীয় প্রান্তিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো প্রায় ২০০ টন স্বর্ণ কিনেছে এবং তারা ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ আরও ৭৫০ থেকে ৯০০ টন স্বর্ণ কিনতে চায়।
গত তিন বছরে ৩,০০০ টনেরও বেশি স্বর্ণ সংগ্রহের পরেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর আগ্রহ কমেনি। LBMA সম্মেলনে দক্ষিণ কোরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধি হিয়োন-সাং জিওন উল্লেখ করেন যে, ২০১৩ সালের পর প্রথমবারের মতো ব্যাংকটি মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদে অতিরিক্ত স্বর্ণ কেনার কথা বিবেচনা করছে।
বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী স্বর্ণের মূল্যের কনসোলিডেশনের সম্ভাবনা বেশি, তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, সামনে প্রত্যাশিত বড় ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরুর আগে পজিশন শক্তিশালী করার সুযোগ রয়েছে।