গত তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রথমবারের মতো গত শুক্রবার EUR/USD পেয়ারের মূল্য 1.1560 লক্ষ্যমাত্রার নিচে পৌঁছানোর পর ট্রেডিং সেশন শেষ হয়, অর্থাৎ এই পেয়ারের মূল্য 1.1560–1.1730-এর প্রতিষ্ঠিত রেঞ্জ থেকে নিম্নমুখী হয়েছে। এখন মূল প্রশ্নটি হচ্ছে: এই পেয়ারের মূল্য কি এই সাপোর্ট লেভেলের নিচে থাকবে, নাকি আগের লেভেলে ফিরে যাবে? পুরো অক্টোবরজুড়েই EUR/USD পেয়ারের বিক্রেতারা মূল্যকে একাধিকবার এই রেঞ্জের নিম্ন সীমানায় নিয়ে এসেছে এবং এই পেয়ারের মূল্য 1.15 ফিগারের বেসের দিকে নেমেছিল। তবে প্রতিবারই নিম্নমুখী মোমেন্টাম দুর্বল হয়ে গেছে এবং ক্রেতারা পুনরায় নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে।

গত সপ্তাহে ডলারের মূল্য বৃদ্ধির প্রধান কারণ ছিল ফেডারেল রিজার্ভ ভবিষ্যতে সুদের হার কমানোর ব্যাপারে আরও সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করেছে। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিষ্কার করা প্রয়োজন: ফেডারেল রিজার্ভের সতর্ক অবস্থান মূলত কোনো সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকের কারণে নয়, বরং চলমান শাটডাউনের ফলে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনের অনুপস্থিতির কারণে গ্রহণ করা হয়েছে। সুতরাং, যদি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়, তাহলে ডলার আবারও চাপের মুখে পড়তে পারে।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কেবলমাত্র সরকারি পরিসংখ্যান দ্বারা নির্ধারিত হয় না। এই প্রেক্ষাপটে, আগামী সপ্তাহটি তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। এসব সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদনের "ফলাফলগুলো" মার্কিন ডলারকে সহায়তা করবে কিংবা চাপের মুখে ফেলতে পারে।
সোমবার, ৩ নভেম্বর, যুক্তরাষ্ট্রে ISM ম্যানুফ্যাকচারিং সূচক প্রকাশিত হবে, যা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নির্ধারণে অন্যতম প্রাথমিক ও গুরুত্বপূর্ণ সূচক। এই সূচক ফেডের জন্য একটি বেঞ্চমার্ক হিসেবে কাজ করে, যা অর্থনৈতিক অবস্থা এবং মুদ্রাস্ফীতি ঝুঁকি বিবেচনার ক্ষেত্রে সহায়ক সূচক। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে এই সূচক ৫০ পয়েন্টের নিচে অবস্থান করছে, যা উৎপাদন খাত সংকোচনের ইঙ্গিত দেয়। তবে গত দুই মাসে সূচকটির ফলাফল কিছুটা ইতিবাচক ছিল, যেমন সেপ্টেম্বর মাসে এটি বেড়ে 49.1-এ পৌঁছায়। অক্টোবরে সূচকটি টানা তিন মাস ধরে বাড়তে পারে, প্রাথমিক পূর্বাভাস অনুযায়ী সূচকটি 49.4 হতে পারে। এই পূর্বাভাসের ভিত্তিতে মার্কেটে বড় ধরনের ভোলাটিলিটি সৃষ্টি হবে না, তবে যদি সূচকটির ফলাফল প্রত্যাশা অতিক্রম করে এবং ৫০-এর ওপরে (পজিটিভ জোনে) পৌঁছে যায়, তাহলে মার্কিন ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। এই ফলাফল ফেডের ডিসেম্বরের বৈঠকে বর্তমান সতর্ক অবস্থান বজায় রাখার পক্ষে সমর্থন জোগাবে। তবে যদি সূচকটি নিম্নমুখী হয় এবং ফলাফল "রেড জোন"-এ থাকে, তাহলে এটি ডলারের জন্য নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। আমার দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী, এই দুর্বল ফলাফল মার্কেটে বেশি ভোলাটিলিটি সৃষ্টি করবে, বিশেষ করে যেহেতু অক্টোবর মাসে ফেড "মাঝারি মাত্রায় হকিশ বা কঠোর" অবস্থান গ্রহণ করেছিল।
বুধবার, ৫ নভেম্বর, যুক্তরাষ্ট্রে বেসরকারি খাতের শ্রমবাজার সংক্রান্ত অনানুষ্ঠানিক ADP প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। যদিও সম্পূর্ণ নন-ফার্ম ইন্ডাস্ট্রি এবং সরকারি শ্রমবাজারের সূচক এই প্রতিবেদনের অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে এটি বর্তমানে মার্কিন শ্রমবাজারের পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার একমাত্র উৎস।
মনে করিয়ে দেওয়া জরুরি যে, এক মাস আগে ADP থেকে প্রকাশিত সূচকটি চার বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো নেতিবাচক ফলাফল প্রদর্শন করেছিল। প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান ৩২,০০০ কমেছে—যা ডিসেম্বর ২০২০-এর পর থেকে সর্বনিম্ন ফলাফল। এছাড়া আগস্টের ফলাফল 54,000 থেকে 3,000 কমিয়ে আনা হয়েছে।
প্রাথমিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, অক্টোবরের ADP প্রতিবেদনে বেসরকারি খাতে 28,000 নতুন কর্মসংস্থানের ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে। যদিও এটি দুর্বল ফলাফল, তবে যদি এটি প্রত্যাশার বাইরে আবার নেতিবাচক ফলাফল হবে, যার ফলে ডলারের ওপর তীব্র চাপ তৈরি হবে। মনে রাখা উচিত, ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল সম্প্রতি যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি বলেন যে, মূল ঝুঁকি এখন মুদ্রাস্ফীতি নয় বরং কর্মসংস্থান খাত এবং তাঁরা নিবিড়ভাবে নতুন প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ করবে। আপাতত এই খাতে শুধুমাত্র ADP প্রতিবেদন পাওয়া যাচ্ছে। যদি এই প্রতিবেদনের ফলাফল নেতিবাচক হয়, তাহলে আবারও ডিসেম্বরের বৈঠকে সুদের হার কমানো হতে পারে—এই সম্ভাবনা মার্কেটে জোরালোভাবে বেড়ে যাবে।
এই একই দিনে যুক্তরাষ্ট্রে, অক্টোবর মাসের ISM সার্ভিসেস অ্যাক্টিভিটি ইনডেক্স বা পরিষেবা খাতের কার্যক্রম সূচক সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। প্রাথমিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই সূচকটি খুবই সামান্য বৃদ্ধি প্রদর্শন করে—৫০.০ থেকে ৫০.৮ পর্যন্ত। তবে, যদি এটি প্রথমবারের মতো সংকোচন স্তরে (৫০-এর নিচে) প্রবেশ করেঃ যেমনটি এই বছর সর্বশেষ মে মাসে হয়েছিল—তাহলে ডলার অতিরিক্ত চাপের মুখে পড়তে পারে, বিশেষ করে যদি উৎপাদন সূচকের ফলাফলও দুর্বল থাকে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচক শুক্রবার, ৭ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত হবে। সেদিন ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের কনজিউমার সেনটিমেন্ট ইনডেক্স বা ভোক্তা মনোভাব সূচক প্রকাশিত হবে। গত তিন মাসে সূচকটি ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পেয়ে অক্টোবরে 53.6-এ পৌঁছে যায় — যা এই বছরের মে মাসের পর সর্বনিম্ন মান। নভেম্বরেও এই নেতিবাচক প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, যেখানে প্রাথমিক পূর্বাভাস অনুসারে সূচকটি 53.0-এ নামতে পারে। সেক্ষেত্রে একটি ধারাবাহিক নিম্নমুখী প্রবণতা গঠনের দৃঢ় কারণ নিশ্চিত হবে।
ISM সূচক, ADP প্রতিবেদন, এবং মিশিগান ইউনিভার্সিটির জরিপ আগামী সপ্তাহের গুরুত্বপূর্ণ (নির্ধারিত) প্রতিবেদন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে চলমান শাটডাউনের প্রতিটি দিন অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে "ব্ল্যাক সোয়ান" ইভেন্টের সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে — যার মাধ্যমে হঠাৎ করে অচলাবস্থা শেষ হতে পারে এবং সেই সঙ্গে নন ফার্ম পেরোল প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, EUR/USD পেয়ারের মূল্যের ভবিষ্যৎ মুভমেন্ট নন-ফার্ম পে-রোলস প্রতিবেদনের ফলাফলের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে, যেখানে অন্য সব সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদন পেছনের সারিতে চলে যাবে।
এই শাটডাউন কবে শেষ হবে? দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এর কোনো নির্দিষ্ট উত্তর নেই। গত শুক্রবার ডোনাল্ড ট্রাম্প "ফিলিবাস্টার বাতিল" করার আহ্বান জানান, যার মানে ৬০ জন সমর্থনকারী ভোটের শর্ত না রেখে "নিউক্লিয়ার অপশন" প্রয়োগ করে শুধু সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া। কিন্তু বেশিরভাগ কংগ্রেস সদস্য, এমনকি রিপাবলিকানরাও তাঁর এই ধারণার পক্ষে নন, কারণ তারাও যখন বিরোধী দলে থাকেন, তখন ফিলিবাস্টার ব্যবহার করেন।
তবুও, সিএনএনের তথ্য অনুযায়ী, উভয় দলের অনেক কংগ্রেস সদস্য গোপনে স্বীকার করেছেন যে আগামী এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে একটি আপসমূলক সমাধানে পৌঁছাতে হবে — নাহলে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। বিশেষ করে, নভেম্বর মাসে ৪ কোটি মার্কিন নাগরিক তাদের ফুড স্ট্যাম্প সুবিধা পুরোপুরি হারাতে পারেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি আটজনের একজন এই খাদ্য সহায়তার আওতায় খাদ্য গ্রহণ করেন। যেমনটা বলা হচ্ছে, "এটি কপালে চিন্তার ভাজ ফেলছে।"
তবে শাটডাউন শেষ হলেও, "কারণ ও ফলাফল"-ভিত্তিক বিশ্লেষণ অপরিবর্তিত থাকবে: যদি প্রধান সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোর ফলাফল নেতিবাচক হয়, তাহলে ডিসেম্বরের বৈঠকে ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা আরও জোরালো হবে। এর ফলে ডলার আবার চাপের মুখে পড়বে, এবং EUR/USD পেয়ারের ক্রেতারা মূল্যকে 1.1560–1.1730 রেঞ্জে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। অন্যথায়, এই পেয়ারের মূল্য 1.15 ফিগারের বেস পর্যন্তই নেমে যাবে না, বরং 1.1480-এর সাপোর্ট লেভেলেও (W1 টাইমফ্রেমে কিজুন-সেন লাইনের সঙ্গতিপূর্ণ লেভেল) পৌঁছাতে পারে।