কারেন্সি মার্কেটে এখনও মার্কিন শাটডাউনের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া অনুভূত হচ্ছে, যা দুই সপ্তাহ আগে সমাপ্ত হয়েছিল। ৪৩ দিনের মার্কিন সরকারি কার্যবিরতি মার্কেটে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে — এমনকি তা মার্কিন ব্যুরো অফ লেবার স্ট্যাটিসটিকস (BLS)-এর ফলাফলের ওপরেও পড়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, বুধবার BLS-এর বিশেষজ্ঞদের সেপ্টেম্বর মাসের কোর পিসিই সূচক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় প্রান্তিকের প্রাথমিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান প্রকাশ করার কথা ছিল। দুঃখজনকভাবে, ঘোষিত প্রতিবেদনগুলো প্রকাশিত হয়নি। কোর পারসোনাল কনজাম্পশন এক্সপেন্ডিচার মূল্য সূচকের প্রকাশনা স্থগিত করে ৫ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হবে নির্ধারণ করা হয়েছে, আর তৃতীয় প্রান্তিকের মার্কিন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ হবে ২৩ ডিসেম্বর। স্পষ্ট করে বলা যায়, মার্কিন অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ ব্যুরো এই প্রান্তিকে প্রাথমিক জিডিপি পূর্বাভাস বাতিল করেছে; এবার এই সূচকের মাত্র দুটি মূল্যায়ন প্রকাশ করা হবে।

এটা বলা ঠিক হবে না যে ট্রেডাররা সম্পূর্ণরূপে "অন্ধকারে" আছে: যেমন, মঙ্গলবার আমরা সেপ্টেম্বর মাসের PPI প্রতিবেদন, খুচরা বিক্রয় সূচক এবং কনফারেন্স বোর্ড থেকে নভেম্বর মাসের কনজিউমার কনফিডেন্স বা ভোক্তা আস্থা সূচকের ফলাফল সম্পর্কে জানতে পেরেছিলাম। এই প্রতিবেদনগুলোর ফলাফল মার্কিন ডলারের জন্য ইতিবাচক ছিল, যার ফলে EUR/USD পেয়ারের মূল্য 1.16-এর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল এবং সাপ্তাহিক নতুন সর্বোচ্চ লেভেলে পৌঁছেছিল। তবুও, বাতিলকৃত প্রতিবেদনগুলোর ফলাফল অন্তত মধ্য-মেয়াদে এই পেয়ারের মূল্যের ভবিষ্যত মুভমেন্টের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারত। যেমন, যদি কোর পিসিই সূচক বার্ষিক ভিত্তিতে ২.৯%-এর উপরে আসত (অর্থাৎ আগস্ট মাসের চেয়েও বেশি), এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি ২%-এর কাছাকাছি পৌঁছাত (প্রত্যাশিত ১.৬%-এর পরিবর্তে), তাহলে মার্কেটে "ডোভিশ বা নমনীয়" অবস্থান গ্রহণের প্রত্যাশা ব্যাপকভাবে দুর্বল হয়ে যেত। সেক্ষেত্রে, মার্কিন ডলারের দর ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেত এবং পুরো পরিস্থিতি (EUR/USD-এর জন্যও) সেই অনুযায়ী বিকশিত হতো।
উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, মার্কেটের ট্রেডাররা বেশ আবেগপ্রবণভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাথমিক বেকারভাতা সংক্রান্ত সাপ্তাহিক প্রতিবেদনের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এই প্রতিবেদন প্রকাশের কিছুক্ষণের মধ্যেই EUR/USD পেয়ারের মূল্য 1.15 রেঞ্জে নেমে আসে, যদিও এই সূচক বেশ স্বল্প গুরুত্বসম্পন্ন এবং অনেকটাই অস্থির সূচক।
তবে EUR/USD-এর বিক্রেতারা তাদের সফলতা ধরে রাখতে পারেনি — এই পেয়ারের মূল্যের নিম্নমুখী মোমেন্টাম শুরু হতেই ম্লান হয়ে যায়। ক্রেতারা আবার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
একদিকে, প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্রকৃতপক্ষে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গিয়েছে: গত সপ্তাহে প্রাথমিক বেকারভাতা আবেদনের সংখ্যা কমে ২১৬,০০০-এ নেমে এসেছে, যা এই বছরের এপ্রিল থেকে সর্বনিম্ন। তবে কিছু সতর্কতা রয়ে গেছে।
বেকারভাতা আবেদনের সংখ্যা ৭,০০০ বেড়ে ১.৯৬ মিলিয়নে পৌঁছেছে। এই সূচকের বৃদ্ধি বা স্থবিরতা এটাই ইঙ্গিত দিতে পারে যে অনেক বেকার ব্যক্তি নতুন চাকরি পেতে ব্যর্থ হচ্ছেন বা দীর্ঘ সময় ধরে বেকার অবস্থায় রয়েছেন। অন্যান্য অর্থনৈতিক উপাদানের সঙ্গে (ভোক্তা আস্থার হ্রাস, ভোক্তা কার্যক্রমের ধীরগতি, খুচরা বিক্রয় সূচকের দুর্বল বৃদ্ধি ইত্যাদি) মিলিয়ে, এটি ইঙ্গিত দেয় যে শ্রমবাজার গতিশীলতা হারাচ্ছে — যদিও এখনো গণহারে ছাঁটাইয়ের ঘোষণা আসেনি।
এই দৃষ্টিকোণ থেকে, প্রাথমিক বেকারভাতা আবেদনের সংখ্যা হ্রাস শ্রমবাজার পরিস্থিতির উন্নতি নির্দেশ করছে এমনটা বলা যায় না; বরং অন্যান্য সামষ্টিক সূচকের গতি বিবেচনা করলে, এমনটি স্পষ্ট নয়। এই তথ্য শুধুমাত্র নতুনভাবে ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের সংখ্যা তুলে ধরে, কিন্তু নিয়োগের গতি সম্পর্কে কিছু বলে না, যা মানুষের নতুন চাকরি পাওয়ার সক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে। একই সময়ে, টানা বেকারভাতা আবেদিনের সংখ্যা বৃদ্ধি ইঙ্গিত দেয় যে একবার ছাঁটাই হওয়া কর্মীরা দীর্ঘ সময় ধরে বেকার থাকছেন — অর্থাৎ, নিয়োগ প্রক্রিয়া মন্থর হচ্ছে। উপরন্তু, শ্রমবাজারে চাহিদা শক্তিশালী হলেই যে নতুন আবেদন সংখ্যা হ্রাস পাবে তা নয়, বরং সংস্থাগুলোর পূর্বেই নিয়োগ কমিয়ে দেওয়ার কারণে তা হবে — অর্থাৎ, ছাঁটাই করার মতো মানুষই আর বাকি নেই। সামগ্রিকভাবে, এটি মার্কিন শ্রমবাজারে পুনরুদ্ধারের চেয়ে নিয়োগগত প্রক্রিয়ার দুর্বলতা প্রকাশ করে।
এরই প্রেক্ষিতে মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, নভেম্বর মাসের শুরুতে প্রকাশিত সর্বশেষ ISM সূচকের কথা। বিশেষ করে, পরিষেবা খাতের ব্যবসা কার্যক্রম সূচক ৫২.৪-এ থেকে সম্প্রসারণ অঞ্চলে থাকলেও, কাঠামোগত উপাদান — নিয়োগ সূচক ছিল ৫০-এর নিচে (৪৮.২), যা পরিষেবা খাতে নিয়োগ হ্রাসের ইঙ্গিত দেয়। অন্যদিকে, ISM ম্যানুফ্যাকচারিং সূচক কমে ৪৮.৭ হয়েছে, এবং উৎপাদন খাতের নিয়োগ সূচক নেমে এসেছে ৪৬.০-এ।
সুতরাং, বেকারভাতা আবেদনের তথাকথিত "ইতিবাচক ফলাফল" সত্ত্বেও, ডলারের জন্য মৌলিক পটভূমি নেতিবাচকই থেকে গেছে। ভবিষ্যতে ফেডের ডোভিশ বা নমনীয় অবস্থান গ্রহণের সম্ভাবনা নিয়ে প্রত্যাশা বাড়ছে (ডিসেম্বরে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা বেড়ে ৮৪%-এ দাঁড়িয়েছে), এবং বৈপরীত্যপূর্ণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদন মার্কিন ডলারের পক্ষে কাজ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তাই, EUR/USD পেয়ারের মূল্যের কারেকশনকে লং পজিশন ওপেন করার সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের দৃষ্টিকোণ থেকে, এই পেয়ারের মূল্য 1.1550 রেজিস্ট্যান্স লেভেল (D1 টাইমফ্রেমে বলিঙ্গার ব্যান্ড সূচকের মিড লাইন) অতিক্রম করেছে এবং এখন টেনকান-সেন এবং কিজুন-সেনের ইন্টারসেক্টিং লাইন (1.1570)-এর ওপরে স্থির থাকতে চেষ্টা করছে। চার-ঘণ্টার চার্টে এই পেয়ারের মূল্য কুমো ক্লাউডের উপরের সীমানা অতিক্রম করেছে এবং ইচিমোকু সূচকের সকল লাইনের ওপরে অবস্থান করছে, পাশাপাশি বলিঙ্গার ব্যান্ডের মিড ও আপার লাইনের মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে। এই সিগন্যালগুলো এই পেয়ারের মূল্যের বুলিশ প্রবণতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার প্রথম লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে 1.1600 (H4 চার্টে বলিঙ্গার ব্যান্ডের আপার লাইন)। মধ্য-মেয়াদে প্রধান লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে 1.1660 (D1 টাইমফ্রেমে কুমো ক্লাউডের নিচের সীমানা)।