মার্কিন ডলারের বিপরীতে অস্ট্রেলিয়ান ডলারের মূল্য 0.66 লেভেলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং একসাথে স্থানীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ লেভেলে পৌঁছেছে। বুধবার, এই পেয়ারের মূল্য 0.6590-এর রেজিস্ট্যান্স লেভেলে পৌঁছায়, যা D1 টাইমফ্রেমে বলিঙ্গার ব্যান্ডসের উপরের লাইনের সাথে মিলে যায়। এটি অক্টোবর মাসের শেষের দিক থেকে পরিলক্ষিত এই পেয়ারের মূল্যের সর্বোচ্চ লেভেল। গুরুত্বপূর্ণ যে, এই পেয়ারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কেবল মার্কিন ডলারের দরপতনের কারণে দেখা যাচ্ছে না, বরং অস্ট্রেলিয়ান ডলারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার প্রতিফলনও বটে। বুধবার অস্ট্রেলিয়ার জিডিপি প্রবৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রতিবেদনের নেতিবাচক ফলাফল প্রকাশ হওয়া সত্ত্বেও, AUD/USD-এর ক্রেতাদের আগ্রহে ভাটা পড়েনি; ফলে এখনও এই পেয়ারের মূল্যের বুলিশ মোমেন্টাম বজায় রয়েছে।

তবে প্রকাশিত জিডিপি প্রতিবেদনের ফলাফল যতটা নেতিবাচক মনে হতে পারে, বাস্তবে ততটা নেতিবাচক নয়। প্রান্তিক ভিত্তিতে দেশটির জিডিপি 0.4% বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে বিশ্লেষকেরা 0.7% বৃদ্ধির প্রত্যাশা করেছিলেন। প্রথম প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি 0.3%, দ্বিতীয় প্রান্তিকে 0.6% এবং তৃতীয় প্রান্তিকে 0.4% হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
বার্ষিক ভিত্তিতে, অস্ট্রেলিয়ার জিডিপি গত প্রান্তিকে 1.8% প্রবৃদ্ধির পর 2.1% হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। 2.2% প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হলেও, এটি গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ফলাফল। পাশাপাশি এটি ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিত—কারণ সূচকটি পরপর চার প্রান্তিকে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা প্রদর্শন করেছে।
প্রতিবেদনের ফলাফল অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ চাহিদা শক্তিশালী ছিল, যার পেছনে অভ্যন্তরীণ ভোক্তা ব্যয়, ব্যবসা, ও সরকারি ব্যয় সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। বিশেষত, অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ 2.9% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা প্রায় পাঁচ বছরের মধ্যে (২০২১ সালের শুরুর পর থেকে) সর্বোচ্চ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
অবকাঠামো ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উল্লেখযোগ্যভাবে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে—বিশেষ করে ডেটা সেন্টার নির্মাণ ও সম্প্রসারণে (ক্লাউড ও AI পরিষেবার চাহিদা বৃদ্ধির পটভূমিতে)। আবাসন নির্মাণেও বিনিয়োগ বেড়েছে।
সরকারি ব্যয়ও এই প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা নিয়েছে—সরকারি বিনিয়োগ 3.0% বৃদ্ধি পেয়েছে, যার গতিপ্রবাহে নৌ অবকাঠামো ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধির অবদান রয়েছে।
গৃহস্থালি ব্যয় 0.5% বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে মূল কারণ ছিল বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য এবং ভাড়ার উপর ব্যয় বৃদ্ধি।
সব মিলিয়ে, তৃতীয় প্রান্তিকে অস্ট্রেলিয়ার ২.১% বার্ষিক প্রবৃদ্ধি রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়ার ২%-এর প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে কিছুটা শ্লথ গতি পরিলক্ষিত হলেও মৌলিক উপাদানগুলোর প্রভাব এখনও শক্তিশালী রয়েছে। প্রযুক্তিনির্ভর ও অবকাঠামোগত প্রকল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি, অবকাঠামোর উন্নয়ন ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
এই কাঠামোগত পরিবর্তনগুলো সাময়িক উপভোগ-ভিত্তিক প্রবৃদ্ধির তুলনায় অধিক স্থায়ী প্রভাব রাখে।
অর্থাৎ, ট্রেডাররা জিডিপি প্রতিবেদনের এই ফলাফলকে যথাযথভাবে অস্ট্রেলিয়ান ডলারের পক্ষে বিশ্লেষণ করেছে। উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও শক্তিশালী শ্রমবাজার পরিস্থিতির মধ্যেও দেশটির অর্থনীতি চিত্তাকর্ষক ফলাফল প্রদর্শন করেছে।
জানিয়ে রাখা ভালো, অক্টোবরে দেশটির ভোক্তা মূল্য সূচক (CPI) বার্ষিক ভিত্তিতে ৩.৮%-এ পৌঁছেছে (প্রত্যাশিত ছিল ৩.৬%), যা জুন ২০২৪-এর পর সর্বোচ্চ। একইসাথে, অক্টোবর মাসে বেকারত্বের হার কমে ৪.৩%-এ দাঁড়িয়েছে (পূর্বাভাস ছিল ৪.৪%) এবং কর্মসংস্থান বেড়েছে ৪২,০০০ জন (পূর্বাভাস ছিল ২০,০০০)। পূর্ণকালীন কর্মসংস্থানের (+৫৫,০০০) বৃদ্ধিই এই বৃদ্ধির প্রধান কারণ।
এই মৌলিক প্রেক্ষাপট রিজার্ভ ব্যাংক অস্ট্রেলিয়াকে কেবল ডিসেম্বর বৈঠকেই নয়, পরবর্তী বছরের শুরুতেও "অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণের" অবস্থান বজায় রাখার সুযোগ দিয়েছে।
অন্যদিকে, বুধবার ADP থেকে কর্মসংস্থান সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর মার্কিন ডলার অতিরিক্ত চাপের মুখে পড়ে। এই সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান ৩২,০০০ জন কমে গেছে। যদিও ADP থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ফলাফল সবসময় অফিসিয়াল প্রতিবেদনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয় না, তবে এই ধরনের ফলাফল একটি উদ্বেগজনক সংকেত, যা মার্কিন শ্রমবাজারে অস্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়।
বুধবারের প্রতিবেদনের প্রকাশের পর, CME ফেডওয়াচের তথ্য অনুযায়ী ডিসেম্বর মাসে ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার হ্রাসের সম্ভাবনা ৯০%-এর কাছাকাছি পৌঁছেছে। মার্কিন ডলার সূচক (DXY) তিন সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন লেভেলে পৌঁছে ৯৮-এর রেঞ্জে চলে এসেছে।
ফলে, AUD/USD পেয়ারের বর্তমান মৌলিক চিত্র থেকে বোঝা যাচ্ছে যে লং পজিশন কার্যকারিতা বেশি।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণেও একই চিত্র লক্ষ করা যাচ্ছে। হায়ার টাইমফ্রেমগুলোয় (H4 ও তার উপরে), এই পেয়ারের মূল্য বলিঙ্গার ব্যান্ডসের মধ্যম ও উপরের লাইনের মাঝে অবস্থান করছে। H4, D1, ও W1 টাইমফ্রেমে এই পেয়ারের মূল্য সবগুলো ইচিমোকুর লাইনগুলোর উপরে রয়েছে, এবং H4 চার্টে বুলিশ "প্যারেড অব লাইন" সিগনাল গঠিত হয়েছে। কারেকশনের অংশ হিসেবে দরপতনের সময় লং পজিশন বিবেচনার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এই পেয়ারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী মুভমেন্টের প্রথম লক্ষ্যমাত্রা হলো 0.6590—যা D1 টাইমফ্রেমের বলিঙ্গার ব্যান্ডসের উপরের লাইন। এই পেয়ারের মূল্য এই বাঁধা অতিক্রম করতে পারলে, AUD/USD পেয়ারের মূল্য পরবর্তী রেজিস্ট্যান্স 0.6640-এর দিকে অগ্রসর হতে পারবে, যেটি সাপ্তাহিক চার্টে বলিঙ্গার ব্যান্ডসের সবচেয়ে উপরের লাইন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।